তুষ্টি ভট্টাচার্য্য)
জীবনের অর্ধ শতক কাটিয়ে দিয়ে ইদানীং আপনার কবিতায় একটা নতুন ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে।
যেমন-
‘কোঁকড়ানো বর্গমূল ছিঁড়ে বানান মুচড়ে
এ সাঁতার বিড়বিড় সামান্য নামানো দিনগুলি
মাঠ পারা যাচ্ছে না, তেতো জিরাফের উচ্চাশা
চশমার মিনিটে জ্যোৎস্না লেগে আছে’
অথবা
‘আমিও জাফরান ভেবেছি
পাতার বাথরুম থেকে জল আর বাক্যের
বারান্দায়
মিউজিক্যাল পাখিদের হ্যান্ডিক্যাম’
অথবা
‘আমি বাঙালীর প্রতি ডাক্তার অনুভব করি
জ্বর হলে আমবাগান ও বৃষ্টির গন্ধ লেগে
যায়
গড়িয়ে যাবার সম্পর্ক যাকে চিনি
সে পায়চারির মধ্যে ঢোকে এবং ব্লাউজের
সঙ্গে ফোনালাপ করে’
অথবা
‘যখন মল্লিকার সমস্ত চৌষট্টি আমি আলতো
করেছি
যখন ক্যামেরার অনুরোধ ডালিম ফোঁটায়
আর অনুরণন মানে চুড়ান্ত দেবদারু
যখন ফর্সা হাসি একটা কোমর ছাড়া কিছু
নয়
কিছু একটা নয় ১৪৪ সিলিকনের ওপর মাধুরী ছোট্ট একটা ড্রপ'
এইরকম আপাত অসংলগ্ন কিছু শব্দের
সমাহার, যা কিনা দুর্বোদ্ধতার কাছাকাছি একটা অনুভূতির মধ্যে নিয়ে যায় পাঠককে। আপনার
এই নতুন ধারার কবিতায় কী বার্তা দিতে চেয়েছেন পাঠককে?
বিশ্বরূপ দে সরকার - রিডারের
প্রোফাইল জেনে তারপর তো লিখতে পারব না। সাধারণ পাঠক কথা
বলা বা বোঝার সময় বাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয় হয়ে শেষ করার কথা ভাবে। এটা এক রৈখিক ব্যাপার। পাঠকের চিত্তে অনেক
বছর ধরে এই অভ্যাসই বর্তমান। তারা চায় চেনা জানা জগত ও শব্দ আয়োজন। কবিতার অভিধানিক
অর্থ, চেনা ভাষা কাঠামোই তারা চান। যখনই তা পায় না সমস্যায়
পড়ে যায়। তার অভিজ্ঞটার সঙ্গে মেলে না। তখন অচেনা শব্দ সজ্জায়
সে বিরক্ত হয়। তার দুর্বোধ্য ঠেকে। হয়তো সে কোনও অনুভূতিরই জন্ম দিতে পারে না। কিন্তু এক্ষেত্রে
আমি অপারগ। আমার কাছে কবিতা একটা খেলা। ছোট বেলায় অপার আনন্দের
স্বাদ পেতে মাঠে মাঠে রবারের বলে ক্রিকেট খেলেছি। চামড়ার বল ছিলনা
বলে কাগজের টোপলা দিয়ে ফুটবল বানিয়ে খেলতাম। তখন তো শিল্প বুঝতাম না। কোনোদিন মারাদোনা
বা মেসি হওয়ার স্বপ্নও ছিল না। কেবলই আনন্দ। সেই একই আনন্দ পাই
যখন যথাযথ একটা শব্দের পাশে আর আর শব্দ বসিয়ে মনে হয় হয়ে উঠল। ছিটকে ওঠা একটা শব্দ
বিছিন্ন বোধের মধ্যে বেজে যায়। গোটা শরীর দিয়ে বুঝতে পারি আমি বুঁদ হয়ে আছি। বাস। কবিতা সব মিলিয়ে
একটা এফেক্ট। কবিতা দিয়ে মানুষকে কিছু শেখানো যায় না। কোনো ইজমকে প্রতিষ্ঠা
করা যায় না। মানুষ নিজের অভিজ্ঞতা দিয়েই চলে। কোনো চেতনা কিম্বা
চরিত্র কিছুই পারে না। আমি এই কবিতার থেকে আলাদা করতে চাই নিজেকে। আমার কোন বার্তা
নেই। আমি
দিতেও চাই না। আমি শুধু খেলার আনন্দটা পাঠকের সঙ্গে ভাগ করতে চাই। কোনো আসরে বা আড্ডায়
যখন লেখা পড়ি। আমার ভালো লাগে পড়তে। নিজের ব্যাপারটা টের পাই, একটা ঘোর তৈরি হয়। আমার নিজের রান্না
আমি নিজেই খাই।
তুষ্টি ভট্টাচার্য্য- চেনা ছকের বাইরে
বেরিয়ে এসে আপনি তৃপ্ত, বোঝা গেল। কিন্তু এই আনন্দটা পাঠকের সঙ্গে ভাগ করার সময়,
পাঠক যদি মনে করেন, এই সবে কবিতা নেই কোথাও, তখন? আপনার সেই রাগী, হতাশ, অতৃপ্ত
আত্মা আবার কি ফিরে আসবে?
বিশ্বরূপ দে সরকার - ফিরবো
কোথায়?
কবিতাতেই
তো।
মাঝে
যে
কবছর
লিখিনি
তখনও
কবিতা
পড়েছি
প্রতিদিন।
এখন
যে
আবার
লিখছি
যদি
পাঠক
শূন্য
হয়ে
যাই,
তাতে
কি! আমি
যে
মফঃস্বল
শহরে
দিন
রাত্রি
সাইকেলে
চেপে
ঘুরে
ঘুরে
বেড়াই।
আত্রেয়ীর
পাড়ে, জেলেদের
পাড়ায়, নৌকোর
ছইয়ের
ভেতরে
বসে
সূর্যাস্ত
দেখি।
দূর
গ্রামের
কল
মিস্তিরি
তার
জীবনের
দুঃখের
গল্প
যে
আমার
কাছেই
ব্যক্ত
করে
তার
জন্য
কি
আমি
কোন
পুরস্কার
দাবী
করি? না
কোনো
ক্যামেরা।
এ আমার নিতান্ত একক অভিনিবেশ। মনে হয় ভাগ্যিস এই পৃথিবীতে মানুষ হয়ে এসেছিলাম। আত্রেয়ীর
চরে
হেমন্তের
কাকেদের
বিষণ্ণ
ওড়াউড়ি
দেখতে
পেলাম।
আমার
শহর, নদী
গাছপালা, মাঠ, প্রান্তর এইসবই আমার আনন্দবাজার আমার কবিতালিপি। আমি
তো
অন্য
কোনো
কাজ
শিখিনি।
পারিনা।কেবল
কয়েকটা
বাক্য
আয়োজন
করতে
চাই
আমার
মতো।
পাঠক
নেবে
কি
না
সেটা
তার
চাপ।
এরজন্য
আমি
কোনো
সরকার
কিংবা
একাডেমীর
কাছে
নালিশ
করতে
পারব
না।
তুষ্টি ভট্টাচার্য্য- ‘মধ্যবর্তী’
পত্রিকার সম্পাদক অর্থাৎ আপনি এবং আপনার টিম মাঝেমাঝেই কবিতা পাঠের আসর বসান
বিভিন্ন শহরে। এই আয়োজন করে আপনি কি কবি, পাঠক ও কবিতার মেলবন্ধন ঘটাতে চান, নাকি
এ আপনার নিছকই পত্রিকা প্রচারের কৌশল?
বিশ্বরূপ দে সরকার- নিছক শব্দটাকে
বাদ দিয়ে বলি, হ্যাঁ পত্রিকার প্রচার
প্রসার তো বটেই। সৎভাবে বলতে গেলে আমাদের কাগজের কোনো পরিবেশক নেই, যে সর্বত্র পৌঁছে দেবে। কোনো বড় ফাইনান্সারও
নেই। আমাদের
যারা লেখক, পাঠক, কবি তাদের নিয়েই মধ্যবর্তী পরিবার। তারা শুধু পত্রিকায়
লিখেই কর্তব্য শেষ করেন না, এর বিক্রি,
বণ্টন, প্রচার ও প্রসারেও সহায়তা করেন। আর তারই একটা ক্রম
হচ্ছে বিভিন্ন শহরগুলোতে মধ্যবর্তীর আড্ডা। সেখানে যেমন কবিতার বিভিন্ন চিহ্ন বা লক্ষণ নিয়ে
আলোচনা হয় তেমনি পত্রিকার প্রচার,
প্রসার নিয়েও স্থানীয় ভাবে ভাবনা চিন্তা মতবিনিময় চলে। যারা কাজ করে না
তাদের বাড়িতে বসে বাতেলা দিলেও চলে। বিশুদ্ধ বিপ্লবী সেজে থাকা যায়। কিন্তু আমাদের কাছে
এটা একটা চ্যালেঞ্জ। পুঁজির সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে ছড়িয়ে পড়ার গেরিলা পদ্ধতি। দীক্ষিত পাঠকের কাছে
পৌঁছনোর তরিকা। মধ্যবর্তীর কোনো বড় প্রতিষ্ঠানের গন্ধ গায়ে মেখে নিয়ে লিটিল ম্যাগাজিনের
ভেক ধরে চলতে হয় না। জনে জনে পত্রিকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে ছবি পোস্ট করার শৌখিনতাও আমাদের
দরকার হয় না। বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে লেখক, পাঠক, কবিদের সঙ্গে আড্ডা
দিয়েই পত্রিকার প্রসারের চেষ্টা করি। কলকাতা বা পার্শ্ববর্তী কেন্দ্রে বসে অপেক্ষা করি
না কখন কোন ইউনিভার্সিটি রাহাখরচ দিয়ে ডেকে পাঠাবে। ওখানে গিয়ে লিটল
ম্যাগাজিন ফাটাবো। তার জন্য সারাবছর ধান্দাবাজি। তার জন্য সরকারি, বেসরকারি বড় মেজ ছোট কবিদের দুকলম দালালী। না। এসব এখনও প্রয়োজন
হয় নি।
তুষ্টি ভট্টাচার্য্য- ফিরে আসি আপনার লেখার কথায়। কবিতার পাশাপাশি গদ্য
রচনার কথা ভেবেছেন কখনও? গল্প, উপন্যাস বা আত্মজীবনী? নিজের কোন কবিতার বই আছে
আপনার? পরবর্তীকালে প্রকাশের সম্ভাবনা আছে কি?
বিশ্বরূপ দে সরকার - না আমার এক লাইনও গদ্য লিখতে ইচ্ছে করে না। লিখতে
পারিও
না। কবিতা ছাড়া অন্য কোনো ক্ষেত্রে জড়ালে আমার ঘোর কেটে যায়।
আগেই উল্লেখ করেছি আমার কোনো গ্রন্থ নেই। আর এখন বের করার কোনো ইচ্ছেও নেই।
তুষ্টিদি এতো ছোট ছোট পর্ব কেন? খিদে যে চরম হয়ে আছে। তোমার প্রশ্ন গুলোই সবথেকে আলোচনার প্রিয়তা। আর বিশ্বরূপদার কবিতা বোধ এক অনন্য পরিবেশন, ....
ReplyDeleteব্যস্ত কবি এবং সম্পাদক উনি। সময় কম পান, তাই ছোট রাখতে হয়েছে
ReplyDeleteবিশ্বরূপকে আরও জানতে চাই, আরও বুঝতে চাই। কেন মধ্যবর্তীর সম্পাদক আদতে মধ্যবর্তী হয়ে নেই, আসলে তিনি একা এবং একান্নবর্তী হয়ে আছেন। তাই তাঁর কবিতা ও যাপনের অবগাহন জানতে চাই আরও আরও বেশি করে। পর্ব পর্বান্তর হোক তাঁর সাক্ষাৎকারের। এই আশাটা কি খুব বেশি হল? তুষ্টিদি এবং বাকের কাছে এ আমার আব্দার, আরও কিছুটা এগোনো যাক বিশ্বরূপ দে সরকারকে নিয়ে।
ReplyDeleteহ্যাঁ, আরও অনেক দূর যেতে হবে
Deleteভাল হচ্ছে বিশ্বরূপ।আরো আরো সুন্দর প্রশ্ন আসুক।আর তার উত্তর আরো ধাঁরালো হোক।
ReplyDeleteবাহ। চলুক এই সাক্ষাতকার। দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর তো আমারই।
ReplyDeleteEi kobita na 7 bar porlam tobu kissu bujhte parlam na, TS eliot o er thke besi soja kore lekhe r William Faulkner er golpo o onek besi bodhogommo. Ei kobita gulo te ki adou kono pran ache? Na ache art na ache commercial material,thaklo sudhu ghonta
ReplyDelete