শেষ লেখা
Wednesday, July 6, 2016
কবিতা সজল
শ্রুতি কবিতা আন্দোলন ৬০দশকের কবিতা চর্চাকে বাংলা কবিতায় স্মরণীয় করে
রেখেছে।এই আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য কবি সজল বন্দ্যোপাধ্যায়।‘শ্রুতি’ ও ‘হাংরি’ এই
দুটিকেই কবিতা আন্দোলন বলা যায় কেননা তা স-ইস্তেহার ছিল।ইস্তেহার যাই থাকুকনা
কেন,সজলের কবিতায় চরিত্রগত দিক দিয়ে যে দুটি জিনিষ নজরে এসেছে তা হল,
১।বিবৃতিময়তা,অতিকথন ও পুনরাবৃত্তির ঝোঁককে পরিহার করা।
২।সংলগ্ন কিংবা অসংলগ্ন ছবির পর ছবি সাজিয়ে চিত্র স্বভাবী কবিতা নির্মান।
ঐতিহ্যকে স্বীকার করেও সুপরিকল্পিত ভাবে তিনি গতানুগতিকতার বাইরে যেতে
চেয়েছিলেন।তার কবিতার গভীরতা অনুভব করতে গিয়ে মনে হয়,যে সময়ে চাইলে প্রথানুগ লিখে
জনপ্রিয় হতেই পারতেন,সে সময়ে স্বেচ্ছায় সব ছেড়ে আদর্শের তাড়নায় নতুন কিছু করবার
আকাঙ্ক্ষায় কবিতা চর্চায় নিজেকে নিযুক্ত
করেছিলেন।উপেক্ষা এবং প্রকাশকদের বিমুখতা সত্বেও এই কবিতাচর্চা যে বিফলে যায়নি,তার
প্রমান,এই সময়ে বাংলা কবিতায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছ। তাঁর কবিতার এক তন্বিষ্ঠ পাঠককুল
তৈরী হয়েছে।নতুন লিখতে আসা তরুনেরা শ্রুতি আন্দোলনের লেখালেখি সম্পর্কে আগ্রহী
হয়েছে।
তিনি চেয়েছিলেন সেইসব কবিতাই যা তাঁর ব্যাক্তিগত অনুভুতিতে অভিজ্ঞতায় স্বীকৃত,
পাঠের পরে যেন মনে একটা মগ্ন আবহ সঞ্চারিত হয়। তিনি বিশ্বাস করতেন,কবিতা রচনা ও
পাঠ যতই অনুশীলন ও পরিশীলন নির্ভর হয়ে উঠছে,ততই কবি ও পাঠকের আত্মপ্রস্তুতির
প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
লিখতে গেলে অনেক কথাই লেখা যায়। সেখানে বর্নময় চরিত্র গান থেকে শুরু করে
সাবলীল বাইবেল অনুবাদ, অনেক কিছুই আসবে। কিন্তু এসবের থেকে সমীচীন হবে তাঁর কিছু
কবিতা পাঠ।
ঘর সংসার
আমার
সারা
রাত
সারা
দিন
কাচের
ওপর
একা
শু য়ে থা কা
ছবির বাড়ী
দরজায় বাংলাতে লেখা-
‘সজল বন্দ্যোপাধ্যায়’
বেল বাজাতেই দরজা খুলল
ভেতরে ঢুকলাম-
আলমারীতে বই
টেবিলে রেকর্ড প্লেয়ার,টেপ রেকর্ডার
পাইপ সাজান আলমারি
দেয়ালে আফ্রিকী মাটির মুখ
যেখানে যা থাকার ছিল সেখানে তাই-
‘বিনা অনুমতিতে
আপনাকে বাইরে ঢুকে পড়তে কে বলেছে’।
কোলকাতা আমি কোলকাতা
হটাৎ নদীর জলে
কোলকাতা
হটাৎ ছবির মধ্যে চিৎকার
মাঝরাতে কুকুরের ডাকে
আংটির হীরেটা খানখান
ঝরে ঝরে গুঁড়িয়ে গুঁড়িয়ে
হটাৎ
বাড়ী ফিরতে গিয়ে
কোলকাতার ভিতরে কিংবা
আমার ভিতরে
ছলাৎছল দাঁড়
আমিও নদীর জলে হটাৎ
কোলকাতা
কোলকাতা আমি কোলকাতা
আমি আমি কোলকাতা আমি কোলকাতা
গল্পসল্প
এসো
ভাঁড়ারে চাল আছে গল্প করি
এসো
পরার কাপড় আছে গল্প করি
এসো
বাচ্চাদের দুধের বোতল সামনে রেখে
গল্প করি
তোমরা গল্প করতে করতে বল
বেঁচে আছি
গল্পের মধ্যে বেচে থাকা
বেঁচে থাকার গল্প
আমি
ভেতরে
ক’জন অন্ধ
হাত বুলিয়ে বুলিয়ে
ছবিটা
দেখছে
১৫ই আগস্ট ১৯৮০
লোকটার
অপরাধ
ছাদে ওড়া জাতীয় পতাকা
চুরি করেছে
লোকটার
অপরাধ
জামা বানিয়েছে
বিচারে লোকটার স্বাধীনতা থাকছেনা
একটি পাণ্ডুলিপি
জন্মের মুহূর্তে
কালপুরুষ মন্ত্র উচ্চারণ করলেন-
পান্ডুলিপি হও-
সেই থেকে ভালবাসার হরফ
ঘৃণার দাঁড়ি
খ্যাতির উদ্ধৃতি-চিহ্ন
অপমানের অর্ধচ্ছেদ
নিজেই অক্ষরে অক্ষরে ক্ষতবিক্ষত
একটা পান্ডুলিপি
আর শেষে একটা সই-
সজল বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ লেখা
শেষ লেখা
নিজের পথে চলতে
নিজের চোখে দেখতে
নিজের জগত গড়তে
নিজের ভাষায় কথা বলতে
যা পেরেছি –অতৃপ্তি
যা পারিনি –অক্ষমতা
কলম রইল খাতা রইল
বারান্দা থেকে শোনা যাবে-
কাগজ ওয়ালা ডেকে চলেছে-
পুরন কাগজ পুরন কাগজ-
অভিযোগ নয় সমস্ত অভিমান
মেপে মেপে ওকেই নিয়ে যেতে দিয়ো-
সেই একদিন
সমস্ত পান্ডুলিপি
সমস্ত মানুষটা
একটা সমাধির ভেতরে।
তাতে এখন দেখা যাবেনা।
লেখালেখি পড়া যাবেনা।
সমাধি ফেটে গিয়ে
সে একদিন বেরিয়ে আসবে
আর তার লেখালেখি
তোমরা,যে যার সমাধির ভেতর
অপেক্ষায় থাকো।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment