Wednesday, July 6, 2016
কহো কানে কানে, শুনাও
প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।
৪২ ৪৫ নিদেন পক্ষে
৪০ এর আশেপাশে এ বঙ্গের উত্তাপ। তারপরে
আবা্র ভোট। এক নাটকের দল এক রাজনৈতিক দলের জন্য পথ নাটিকা করছে, উদ্দেশ্য,
রাজনৈতিক প্রচার। নাটক জমে উঠেছে চারিদিকের লোকজনও বেশ থিকথিকে, সদ্য সবাই মিলে
গাইছে, “লোডশেডিং নাই আর লোডশেডিং নাই” ঝমঝমিয়ে নামলো অন্ধকার। ভিড়ের থেকে কিছু হাসি কিছু রসিকতা সেই গানের
সুরে ঢুকেও পড়েছিল তবু শেষ রক্ষা হল মোবাইল ফোনের আলোতে কারণ গোধূলিতে নাটক শুরু হয়েছিল বটে তবু তখন ছিল
অন্ধকার। একরত্তি মেয়ের হাতে খড়ি। এক বাক্স রঙ দেবো তাকে। আমার দেরী হয়ে
যাচ্ছে । দোকানি “ ঠিক করে কথা বলবি , আমি সবাই কে চিনি, আমাকে চেনাতে হবে না...”
“আমাকে এক বাক্স ভর্তি রঙ দেবেন ছোট্টি মেয়ের জন্য” “ আরে কি বলব বলুন তো, হাঁটুর
বয়েসি আর কি সব ভাষা এদের” “ আপনি তো বড়, শিখিয়ে দিন ও আর বলবে না”।
সেদিন আশ্রমে খেতে বসেছি , স্বামীজী অন্নতে হাত দিয়ে এক মন্ত্র বললেন, যার অর্থ
আমি বুঝলাম, যে অন্ন আমার খিদে মেটায়ে তার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। বাকি সময়ে বন্ধুদের
সাথে হাসাহাসিতে পার করে বাড়ি ফেরার পথে সেই কৃতজ্ঞতা বোধ আবার ফিরে এলো। ভেবেছি
কখন? কৃতজ্ঞ আমি মাটির কাছেও যে মাটি আমার ভার সহ্য করে। এক বয়স্কা মহিলা আমার
পাশে দাঁড়িয়ে, “আমি সিট ছাড়বো না ছাড়বোনা” ভাবছি। ক্লান্ত আমিও আর আমার জীবনী
শক্তির দৌড় আমি জানি। আমার মাথায় বদ বুদ্ধিরও। বিচার বিবেচনা শেষে করে বলি, “ আপনি
বসুন আমি দাঁড়াই আবার আপনি দাঁড়াবেন আমি বসবো”। তিনি ক্লান্তি
মুছে হাসি মেখে বসলেন। বাসের জানলার হাওয়া আমার দায়িত্ব বোধ কেড়ে নেয়। হঠ্যাৎ এক
পুরুষ কণ্ঠ ডেকে ওঠে,” দিদি আপ ইধার বৈঠিয়ে” “আপনি নেমে যাবেন ?” “ হাঁ দিদি” যে
দায়িত্ব বোধ এতক্ষন উড়ছিল তাকে সামলে আমিও হাসি মুখে বসে পড়ি । আর সামনের মহিলা
ততক্ষনে ক্লান্তিতে ঘুমের কোলে মাথা রেখেছেন। দেখে বেশ তৃপ্ত হলাম। আমার দায়িত্ব
বোধ আবার জানলার বাইরে । কি যেন এক সম্ভব
অতৃপ্তি হাত ধরে টানছে, “ আপনি নামেননি
!!!” “না ,দিদি ঠিক হ্যায়” আমি প্রায় উঠেই
পড়েছি , “Please, দিদি উঠিয়ে মাত আচ্ছা লাগ রাহা হ্যায়...”
সারাদিনের স্মিত আনুভুতির টুকরো হাতের পাতায় আগলে ঘরে
ফিরি। কিছু মানুষের হাত ধরে রাখি শক্ত করে। দিনে দিনে বিশ্বাস বাড়ে। বেঁচে থাকার মানে খুঁজে পাই। খুঁজে পাই তোমাকে
বাসের খালি আসনটিতে। তোমার সাথে দেখা হয়ে যায় এমনি টুকরো
টাকরাতে। সুন্দর থেকে সুন্দর অনুভুতির মাঝে।
“ কোন কোন মানুষের এমন কিছু কিছু কথা বলার থাকে যে, তা নিজের সঙ্গে ছাড়া,
নিজস্ব ভাষা বিন্যাস ছাড়া বলা যায় না। সেই সব মানুষকেই বোধ হয় কবিতা লিখতে হয়।”
এমন কিছু মানুষের
মধ্যে তুমিও আছো কবি সজল বন্ধ্যোপাধ্যায়। তোমার নাম নিতে গিয়ে সকলে একই
বাক্যে বলে “সজলদা মানুষ ছিলেন অত্যন্ত বড়” শুধু বড়! যারা তোমার পাঁচ তলার
ফ্ল্যাটে তোমার সানিদ্ধ্যে কাটিয়ে দিত কিছুক্ষন তারা তোমার “বড়” হয়ে ফিরত। তোমার
সারল্য তাদের সরলতা দিত। তোমার উষ্ণতা রাখত উষ্ণ করে। তোমার প্রশয়ে মেলে ধরত তারা
নিজেদের। তুমি জানতে? অনেক সত্য আর সুন্দর কিছু একসাথে হলেই “সজল” হয়। থাকার মত
নাথাকাও স্বাভাবিক। যাদের তুমি তোমার আত্মীয় করলে তারা বার বার আসবে তোমার কাছে।
সমস্ত সুন্দর
উষ্ণ সারল্যে রইলে
তুমি। একটা খোলামেলা মিশুকে হাওয়াতে। রোজকার
যাপনের
পরিশীলতায়।
তুমি ছড়িয়ে দিলে
নিজেকে। এখন আমারা ছুঁয়ে থাকব তোমাকে। আর দিন দিন মুগ্ধতা ছড়িয়ে থাকবে দিকে দিকে।
অজো নিত্যঃ শাশ্বতোহয়ং পুরাণো
ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে।।
এই আত্মা কখনও
জন্মে না বা মরে না । ইনি সৎ রূপে নিত্য বিদ্যমান। ইনি জন্ম রহিত, নিত্য শাশ্বত
এবং পুরাণ; শরীর হত হইলেও ইনি হত হন না।
( গীতা শ্লোক ২।২০ )
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment