Wednesday, July 6, 2016
কবিতার প্রিয় মানুষ
ভাষাহীন ভাষার কবি সজল বন্দ্যোপাধ্যায়
‘সব কাঠ চিতাকাঠ
নয়’(সন্ন্যাসীর পায়ে শিকল/ভবেশ বসু) তেমনি বলি সব মানুষই মানুষ নয় বা সব কবিই কবি
নয়।এক ভাষাহীন ভাষার কবি –সজল বন্দ্যোপাধ্যায়,বললেন আর এক বিদগ্ধ কবি –সম্পাদক
উত্তম দাশ।মানুষ সজল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে আমার পরিচিতি বা যোগাযোগ ছিল না,কোনদিন
চাক্ষুস দেখিনি তবে কবিকে চিনেছি তাঁর কবিতার মধ্য দিয়ে একজন পাঠক হিসেবে।তাঁর
স্লিম কবিতাগুলি আমার খুব প্রিয়।অল্প কথায় চরম সত্যটি তুলে ধরা।ক’জন কবি পারে এমন
সাহস দেখাতে।
একটু হিসেব করলে
দেখা যায় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থটি বের হয় ১৯৬৬সালে,তখন আমি ষষ্ঠশ্রেনীতে পড়ি।তার
১১ বছর পর ১৯৭৭সালে যখন তাঁর ২-য় কাব্যগ্রন্থ বের হয় তখন আমি কলেজ পেরিয়ে সদ্য
চাকরিতে ঢুকেছি এবং যোগাযোগ শূন্য।একজন কবি কবিতায় বড় হয়েছেন আর একজন পড়ুয়া বড়
হয়েছি ছাত্র হিসেবে।ধীরে ধীরে কলম ধরেছি দু’একটি পংক্তি রচনার সাহস
দেখিয়ে।কবিদের পথ সতত কখনও সমান্তরাল কখনও আড়াআড়ি।যে যেখানেই থাকুন না কেন কবিতার
ভাষাহীন দুঃখবেদনায় আপ্লুত হয়ে আত্মীয়বোধে একজন বন্ধু হয়ে ওঠেন......হয়তো কোনদিন
দেখাও হয় না।কথাও হয় না।আত্মিক যোগাযোগ তৈরী হয়,মেহেক ছড়িয়ে পড়ে।
ভাষাহীন ভাষার কবি
অথচ কবির কবিতায় আশ্চর্য হীরক দ্যুতিময় ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুটি।অনঢ়।সূক্ষ
মেধাযুক্ত এক চিরন্তন সজাগ পিরামিড।শুনেছি মিশরের পিরামিডের কেন্দ্রের অন্তঃস্থলে
পরিপূর্ণ থাকে বহু অমূল্য ঐশ্বর্য।‘কালো কালো অক্ষরে গড়ে তুলি
নিজেরই পিরামিড।’(কালো বনিকের পিরামিড/সুনীল মাজি)।তাইতো সজলদা গড়ে
তুলেছেন দিনপ্রতিদিন...আমি সারাদিন শুধু আমি শুধু আমি।অথবা...আমার সারা রাত সারা
দিন/ কাচের ওপর একা/শুয়ে থাকা।প্রতিনিয়ত মির্মাণ করে গেছেন ভাষাহীন ভাষার
পিরামিড।কবিতা হয়ে উঠুক কবির মর্মকথা।ছাপা অক্ষরে বইয়ের পাতায় সৃষ্ট পিরামিডটি পড়ে
রহস্যময় আবহে পাঠক মুগ্ধ হয়ে হাঁটূ মুড়ে বসে একটা বিড়ি ধরাক।
কবিরা
ক্রান্তদর্শী।হিন্দিভাষায় একটি প্রচলিত প্রবাদ অনেক বন্ধুরা আমাকে শোনায়...জহাঁ না
পহুচে রবি বহাঁ পহুচে কবি।সজলদার ক্ষেত্রে দেখি কথাটা একদম খাঁটি।তিনি ২৬শে
জানুয়ারি ২০০৬ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কবি সুবোধ সরকার সম্বন্ধে যা বলেছিলেন
তাহল – ‘সুবোধকে আমার বরাবরই বড় কবির চেয়ে বড় যোগাযোগকারী
ধান্দাবাজ মনে হয়েছিল।’ আজ দশবছর পর এই ২০১৬তে কথাটা মিলিয়ে দেখুন
পাঠক।কতটা বিচক্ষণ ছিলেন কবি সজল বন্দ্যোপাধ্যায়।
‘শ্রুতি’
আন্দোলনের অন্যতম এই কবিকে নিয়ে আরো আলোচনা দেখেছেন সবাই।আমি সেদিকে রিপিট করতে
চাচ্ছি না।এটুকু বলতে চাই যে নতুন ভাষায় পরিবর্তিত নতুন দিনের উপযোগী করে তোলার যে
আগ্রহ দেখতে পেয়েছি তা আমাকে মুগ্ধ করেছে।তাঁর প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা নিবেদন
করি।সবশেষে তাঁর প্রতি প্রণাম জানাই আমারই দু’টো পংক্তি তুলে এনে
প্রখরতা রোদের
অহংকার/শীতলতা ছায়ার অলংকার
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment