Wednesday, July 6, 2016
জামাইদার চায়ের
দোকান
নগ্নদেহে দাঁড়িয়ে থাকা পাগলের
মুখে শুনি নন্দীগ্রামের কয়েকছত্র। জামাইদার চায়ের ভাঁড় হাতে এহেন পাগল ল্যাটিন
আমেরিকার ঠিকানা খোঁজে। কোথাও অ্যাসিড বৃষ্টি হবে শুনে দুটো পাখি পালিয়ে এসে বসেছে
টালির চালে। আমরা মাটি দিয়ে হাত ধুয়ে গ্লাসের দিকে তাকিয়ে জামাইদার জাদুবাস্তবিক
রূপান্তর অনুভব করি। পুনঃপুন চায়ের দোকানে ঢুকে মৌলবাদীরা ঘোঁতঘোঁত ক্যাওরামি করে।
এহেন কতো লোকের জীবন যে আসলে কর্দমাক্ত সেকথা ফাঁস হয়ে যায় চায়ের টেবিলে। ফলত
মৌলবাদীরা বোঝে দুএকটি লম্বাচওড়া ভাষণ দেওয়া ছাড়া তাদের আর কিছু করার নেই এই অনন্ত
বিষাদের দেশে। জামাইদা নিজে চা না খেলেও সমস্ত প্রকার চায়ের ব্যুৎপত্তি জানে। চা
বস্তুটি কিভাবে কম্যুনিস্ট ইস্তাহারের প্রতিটি বাক্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত
সেবিষয়ে চা-পিপাসুদের মতামত নাড়াচাড়া করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরাজী সিলেবাস দিনের
পর দিন রগড়েও যেসব সহজউত্তর খুঁজে পাইনি, সেসব কীকরে জামাইদা জানলো, একথা জিজ্ঞাসা
করেছি কবি শঙ্খ ঘোষকে। আমাদের প্রশ্ন শুনে মৃদুমৃদু হেসে তিনি বলেছেন, জামাইদাকে
বোলো লিকারের মাত্রা কিছুটা বাড়াতে, সেখানেই উত্তর পেয়ে যাবে পশ্চিমবঙ্গের
রাজনৈতিক দলগুলি কেন শেষপর্যন্ত বাদামের খোসা হয়ে যায়।
লালন মিস্ত্রীর চায়ের দোকান
সমষ্টিবাচক বিশেষ্যদের খেলা
ভেবে সকলে যখন বুঁদ হয়ে বসে আছে, লালনের একভাঁড় চা স্রেফ জাদুবাস্তবতা। তখন শুধু
পুরুষ বা নারীকে নয়, আমরা ভালবাসতে পারি যে কোনো ক্রিয়ার কালকে। লালন বলে, চাঁদকে
মেরো না গুরু, নক্ষত্রকে না ভুলে দেখো স্বাধীনতার কোনো দৈর্ঘ্য প্রস্থ বলে কিছু হয়
না। লালন বলে, ভালো চায়ের বিচার যদি না করো, ভালো স্বপ্নের মাপকাঠি খুঁজো না ভায়া।
স্বপ্ন দেখা ও না-দেখার ওপর নির্ভর করে সমাজের ভাঙন।কয়লার উনুন ছেড়ে ইন্ডাক্সন
উনুন ব্যবহৃত হয় বলে লালনের পারিবারিক ইতিহাস শোনানোর কিছুটা সময় মিলে যায়। রিষ্ট
ওয়াচ রুমালে ঢেকে শুনি, লালনের পরিবার সীমানা পার হয়ে কেনো চলে এসেছিল। সে এক
বীভৎস মরচে পড়া দাগ যার সঙ্গে চা বানানো পদ্ধতির গূঢ় সম্পর্ক হয়তো কিছু আছে। চায়ের
দোকানের ভাষায় তেমন বৈষম্য নেই। নেই কোনো জিভের জড়তা। মধুবংশীর গলি থেকে বেরিয়ে
একদল কল্পকর্মী লালনের দোকানে বড় ভাঁড় চা খেয়ে বন্দে আলী মিয়াঁর কবিতার দেশে চলে
যায়।
নারানদার
চায়ের দোকান
নারানদার চায়ের দোকানে বসে
ছোটবেলায় ফুটবল খেলার অনেক মেটাফিজিক্স শিখেছি। সেখানে নিয়মিত এসে বসতেন মদনমোহন
তর্কালঙ্কার, শচীনদেব বর্মণ এবং গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ। চা
খেতে খেতে তাঁরা আমাদের শোনাতেন আদিম যুগের চা-কাহিনি যেখানে চা বিক্রেতারা গান
গেয়ে আর জীবনের সহজিয়া বলতেবলতে পরিবেশন করতেন চা। বহু কারিগর শিল্পীর সাথে আমার
পরিচয় হয়েছে চায়ের দোকানের সূত্রে। কারিগরদের কথায় প্রজাপতি নামক পতঙ্গটিকে মারমেড
হয়ে উঠতে দেখেছি। নারানদার চায়ের দোকান কয়েক আলোকবর্ষ দূরে হলেও আশেপাশে আমিষ ও
নিরামিষ ভোজীদের সহবস্থান লক্ষ্য করা যায়। দেখা যায় শ্রমিক ও মালিক একই টেবিলে বসে
পান করছে স্কচ হুইস্কি। নারানদা অদ্ভুত ডানাওয়ালা বৃদ্ধ সেজে চায়ের গ্লাসগুলিকে রঙ্গিন
করে তোলার পর কলেজ পড়ুয়ারা ফিজিক্যাল বিস্ময়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় নারানদার দিকে।
একদা নারানদা
বামপন্থী ভাবুকদের গুরু ছিলেন।
আজ তিনি চা বিক্রি করা ছাড়াও পাখিওয়ালাদের কাছ থেকে পাখি কিনে উড়িয়ে দেন
জাদুবাস্তবতায়।ফিজিক্সের ছাত্ররা এই দৃশ্য দেখতে দেখতে ভারতবর্ষের প্রধান
রেলস্টেশনগুলোকে নাইন্থ সিম্ফনিতে নিয়ে যায়। যারা খুবই সাধারণ, লক্ষ্য করি আজও
নারানদা চাল বাছছেন গম বাছছেন আর বাঁশি বাজাচ্ছেন।
শঙ্কর
ভাইয়ের চায়ের দোকান
শঙ্কর ভাইয়ের চায়ের দোকানটিকে
লোকেরা গ্রিন হাউস বলে জানে। গ্রিন হাউস বলতে সাধারণত যে বিপত্তির ছবিটা বোঝানো
হয়, তার মোতাবেক এর সঙ্গে কোনো সম্পর্কই নেই। আসলে শঙ্কর ভাই গ্রিন টি ছাড়া অন্য
কোনো চা বিক্রি করে না। প্রতীক হিসাবে কতগুলো সবুজ রঙের বস্তু ওই দোকানে ঝুলতে
দেখা যায়। তার অন্যতম হলো সবুজ রঙের ব্রা। ব্রাগুলি শঙ্কর ভাইয়ের দোকানে টিয়াপাখি
হয়ে মেলোডি ঝাপটায়। পৃথিবীর একটিমাত্র রঙ যার ভেতরে সমস্ত পৃথিবী অবস্থান করে, সে
রঙের নাম জাদুবাস্তব হয়ে গেছে। একথা বহুবার বহুরূপে শঙ্কর ভাইয়ের চায়ের গন্ধে
উচ্চারিত হলে, কিছু মনস্তত্বের গবেষক নিজেদের প্রকাশিত গ্রন্থের নতুন সংস্করণে
মনোযোগ দেয়। বয়সের কারণে শঙ্কর ভাইয়ের দৈহিক যন্ত্রপাতি কিছুটা নিষ্ক্রিয় হয়ে
গেলেও এহেন কুটিরসম দোকানটিকে গোয়েন্দা দপ্তর নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখে,
সেখান থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে অন্যত্র।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment